শিরোনাম

10/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দিন।

বিএনপির জন্য ভয় বিএমপি

            


                 বিএনপির জন্য ভয় বিএমপি



        - রাবিদ মাহমুদ চঞ্চল -

১লা সেপ্টেম্বর বিএনপির শুভ জন্মদিন। বহু রক্ত,বহু তাজা প্রান, ঘাত-প্রতিঘাত,সংঘাত, সংগ্রাম,ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্যে দিয়ে ১৯৭৮ সাল থেকে আজ অব্দি মাথা উচু করে জাতীয়তাবাদের মূল মন্ত্রকে বুকে লালন-পালন করে আসা দলটির নামই হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি- বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি)। ধানের শীষে মিশে থাকা কোটি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীদের রাজনৈতিক শেষ আশ্রয় স্থল হলো এই বিএনপি। 

অতিসম্প্রতি বিশেষ করে ৫ আগষ্ট সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে এই দলে কিছু নেতা ও নেতাদের ছত্র ছায়ায় অনুপ্রবেশকারীদের উইপোকার মত রুপ দেখে আমার মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করতে শুরু করছে। সেকথা আলোচনা শেষ অংশে রেখেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজকের দিনক্ষণ পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে আসা যাক।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এখানে উল্লেখ করা জরুরী বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছিল। ২৮ আগস্ট ১৯৭৮ সালে নতুন দল গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে দলের এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সকল সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত নতুন দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনা সদস্যদের গুলিতে সপরিবারে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর প্রায় তিন বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ শাসিত হয় অনির্বাচিত সরকার দ্বারা। সে সময় দেশের এক মহাক্রান্তিকালে বিধ্বস্ত বাংলাদেশে দ্বিতীয় বারের মত আবারও হাল ধরেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। উল্লেখ করা আবশ্যক এর আগে প্রথমবারের মতো ১৯৭১ সালে যখন শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানীদের হাতে আটক হয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান তখন দিশেহারা জাতির সামনে আলোর দিশারি হয়ে ২৬ শে মার্চ রাতে চিটাগাংয়ে অবস্থিত অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের তরুণ মেজর জিয়াউর রহমান তীব্র জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বেতার মাধ্যমে জাতির প্রতি স্বাধীনতা সংগ্রামে আহ্বান জানান।

মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে। নির্বাচনে অংশ নিয়ে মালেক উকিলের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ৩৯টি ও মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ২টি আসনে জয়লাভ করে। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল ৮টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ১টি ও মুসলিম ডেমোক্রেটিক লীগ ২০টি আসনে জয়লাভ করে। ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দুই বছরের মাথায় জিয়াউর রহমান আততায়ীর হামলায় নিহত হলে তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতি হন। পরে ১৯৮৩ সালে আব্দুস সাত্তারকে সরিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি হন। এরপরে ইতিহাসে শুরু হয় নতুন এক স্বৈরাচারী পোশাকে মোড়ানো রাজনীতি ( বিগত আওয়ামী লীগ ২০০৯ থেকে ৫ আগষ্ট ২০২৪ সালের তুলনায় বড়ই নগন্য) । সামরিক খোলসে জন্ম নেয় জাতীয় পার্টি। 

দেশ ও দেশের মানুষকে স্বৈরাশাসকের কবল থেকে মুক্ত করতে বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ৭ দলীয় জোট গঠন করা হয়। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি এরশাদ আমলে অনুষ্ঠিত ২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন বয়কট করে। এই আন্দোলনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বৈরাচারী এরশাদের সাথে কোন আপোষ না করায় বেগম খালেদা জিয়াকে আপোষহীন নেত্রী বলা হয়।

 বিএনপি সহ সকল বিরোধী দলের গণআন্দোলনে ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ পদত্যাগে বাধ্য হয়। এরপর তিন দফা রূপরেখা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিএনপি সর্বাধিক আসনে জয়লাভ করে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো পূর্ণ মাত্রায় গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। পাঁচ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সংবিধানের ধারাবাহিকতা সমুন্নত রাখতে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়।  কিন্তু  এ নির্বাচন আওয়ামী লীগ বয়কট করায় একই বছর ১২ জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসা এ দলটির হয়ে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। কিন্তু কিছু কাল যেতে না যেতেই আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডে বিরক্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয় দেশ জুড়ে। যার ফলে দ্রুতই ঘুরে দাড়ায় বিএনপি। তারই প্রমান মেলে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করার মধ্যে দিয়ে। মোট ২১০টি আসন নিয়ে চারদলীয় ঐক্যজোট ক্ষমতায় যায়। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার পায়তারা করতে মোটেও কমতি রাখেননি। বিএনপিকে নানা রকম কলাকৌশলে চাপে রেখে তাদের পছন্দের কৃতদাস আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর গভীর চক্রান্ত চালিয়ে যেতে থাকেন। আর এই সুযোগ তাদের হাতের নাগালে এসে পড়ে ২০০৭ সালে। ১১ জানুয়ারি ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন বা এক এগারো নামের এক নাটক মঞ্চায়িত হয়।

সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জারি হয় জরুরি অবস্থা। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবরণে গঠিত হয় সেনা নিয়ন্ত্রিত 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার'। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পরবর্তীতে এটিকে ওয়ান ইলেভেন হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। দিনভরই চারদিকে ছিল নানা গুজব, গুঞ্জন। সার্বিক পরিস্থিতি ছিল থমথমে। এই অবস্থায় বিকেল চারটার দিকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত,শেখ সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল যোগ দেন কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে। কূটনীতিকদের মধ্যে বৈঠকে ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার ডগলাস ফসকেট, জাপানের রাষ্ট্রদূত ইনোওয়ে মাসাইয়েকি, ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) ডেলিগেশন প্রধান রাষ্ট্রদূত ড. স্টিফান ফ্রোইন ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রেনাটা ডেজালিয়েন। বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত বৈঠক শেষে অনেকটা হতাশ হয়ে বেরিয়ে আসেন আওয়ামী লীগ নেতারা। আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাংবাদিকদের কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান তারা। কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বাসা থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা সরাসরি চলে যান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির সুধাসদনের বাসায়। আওয়ামী লীগ নেতারা বের হওয়ার আধাঘণ্টা পর বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বাসায় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। এর নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া । বৈঠক শেষে তারাও মুখ খোলেননি। সোজা চলে যান গুলশানের সেখানে তারা বৈঠক করেন দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। এর আগে দুপুর পৌনে বারোটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে তার বারিধারার বাসায় বৈঠক করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী।কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রধান দু'টি দলের বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ দুপুর বারোটায় বৈঠক করেন আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে। এতে কমিটির সদস্যরা ছাড়াও সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকের পরপরই রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন বঙ্গভবনে তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্যদিকে বিকেল সাড়ে চারটায় উপদেষ্টা পরিষদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক বাতিল করা হয়। দু'-একজন ছাড়া উপদেষ্টাদের প্রায় সবাই বঙ্গভবনে গিয়ে বৈঠক বাতিলের খবরে ফিরে আসেন।

বঙ্গভবনের বৈঠক শেষে বিমান বাহিনী প্রধান, নৌ বাহিনী প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র‍্যাব, বিডিআরসহ সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের নিয়ে সেনাসদরে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ। রাত সাড়ে আটটায় বঙ্গভবনে পুনরায় ডাকা হয় উপদেষ্টাদের। কোনো বৈঠক ছাড়াই উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে উপদেষ্টাদের অবহিত করা হয়। এসময় উপদেষ্টাদের সবাইকে পদত্যাগের অনুরোধ জানানো হয়। এরপর প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাষ্ট্রপতি। একইসঙ্গে উপদেষ্টারাও পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ডক্টর ফকরুদ্দিন আহমদকে। তিনি নতুন উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। এসব নাটকীয় ঘটনা ও টানটান উত্তেজনা-উদ্বেগের মধ্যেই সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয় 'অভ্যন্তরীণ গোলযোগে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক জীবন বিপন্ন এবং বিপদের সম্মুখীন হওয়ায় রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ সংবিধানের ১৪১ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন'। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়— বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জরুরি অবস্থা কার্যকর হবে। একইসঙ্গে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ঢাকাসহ সকল মহানগর এবং জেলা শহরে কারফিউ বলবত থাকার ঘোষণাও দেয়া হয়। এরপর নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রাত সাড়ে এগারোটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ । ভাষণে তিনি বলেন, একইসঙ্গে দু'টি দায়িত্ব নেয়ার পর তাকে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। এই অবস্থায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথকে সুগম করতে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রাতে সরকারের তথ্য অধিদপ্তর থেকে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে রাজনৈতিক সংবাদ ও সরকারের সমালোচনামূলক সংবাদ প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় টিভি চ্যানেলের খবর ও টকশো। 

 এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক-এই ওয়ান ইলেভেন কে অনেকেই মাইনাস টু ফর্মুলা হিসেবে দেখলেও প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা। যেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করা এবং বিএনপিকে মাইনাস করা ছিল পার্শ্ববর্তী ভারতের একটি চক্রান্ত। তার ফলাফল আমাদের সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩০টি আসন লাভ করে ভারতীয় পদলেহনকারী শেখ হাসিনা।  অদৃশ্য এক শক্তির ছোয়া পেয়ে সরকার গঠনের পর মরিয়া হয়ে ওঠে আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পাঠিয়ে দেয় বৃন্দাবনে। একে একে ২০১৪,২০১৮ ও ২০২৪ এই তিনটি প্রহসনের নির্বাচন জাতিকে উপহার দেয় আওয়ামী লীগ। সম্পদ পাচার, লুটপাট,খুন যখম,হত্যা,গুম,বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ব্যাংক লুট,কুইক রেন্টালসহ সকল প্রকার মেগা দুর্নীতির শাখা প্রশাখায় বিচরণ করেন আওয়ামী লীগের টপ টু বটম। স্বয়ং শেখ হাসিনাকে মাদার অফ মাফিয়া উপাধি দিয়ে বসেন বিদেশি গণমাধ্যম আল-জাজিরা। 

টানা ১৬ বছরের ক্ষমতা কালে আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে ধ্বংস করা। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের মাধ্যমে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপর অমানুষিক -অমানবিক নির্যাতন করা হয়। জোর করে চিকিৎসার অযুহাতে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিএনপির রাজনীতি ধ্বংস করার জন্য । জোরপূর্বক খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা হতে থাকে একাধারে। দেশজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে লক্ষ লক্ষ মামলার বোঝা চাপিয়ে দেওয়া, বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুম করে দেওয়া, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করার মধ্য দিয়ে বিএনপি শব্দটা বাংলাদেশ নামক দেশের ডিকশনারি থেকে মুছে দেওয়ার মহাপ্রলয়ংকারী চেষ্টার কোন কমতি করেনি আওয়ামী লীগ। এমনকি তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি'র চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসার আশ্রয়স্থল বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে একাকী একটি মানুষকে একটি নির্জন কারাগারে রাখার যে দৃষ্টান্ত আওয়ামী লীগ স্থাপন করেছে তা মনে হয় পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। বিএনপি'র অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে একটা সময় বেগম খালেদা জিয়াকে যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করার যে নীল নকশা করা হয়েছিল সেটি বেগম জিয়া স্পষ্টই বুঝতে পেরেছিলেন। এমনকি তাকে বহুভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল বিদেশ চলে যাওয়ার জন্য কিন্তু তিনি এদেশের মাটি ও মানুষ,বিএনপি লাখ লাখ নেতাকর্মীদের আশ্রয় স্থল হিসেবে থেকে গেছেন বাংলাদেশে। তদ্রুপ হাজার বার চেষ্টা করার পরেও বিএনপি'র নেতাকর্মীদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে পারিনি আওয়ামী লীগ। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান,বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের উপর আস্থা রেখে রাজপথে স্বৈরাচারী সরকারের দমন পীড়ন উপেক্ষা করে যে অদৃশ্য শক্তির বলে বলিয়ান হয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর যন্ত্রণার বেড়াজালে নিজেদেরকে সুখি মনে করেছিলেন তার অপর নামই হল বিএনপি। 

এই ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বলিত বিএনপি নিয়ে আজ আমার মনে ভয়ের উদ্বেগ হয়েছে। কেননা গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপি'র মিছিলে -মিটিংয়ে একদল বিএমপি (বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট পার্টি) অনুপ্রবেশ করেছে। কিছুদিন আগেও যে সব লোকজনকে আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে আম্লীগের কর্মী বা নেতা হিসেবে প্রথম না হলেও দ্বিতীয় সারিতে দেখা যেত তাদেরকে এখন বিএনপি'র মিছিলে-মিটিংয়ে প্রথম সারির খুব কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে। এক্ষনে অনেক বিএনপি'র নেতাদের দেখা যাচ্ছে যারা ছিল কর্মী শূন্য তারা এখন তাদের কর্মী বাহিনী বাড়াতে এই সমস্ত আম্লীগ মার্কা বিএমপি গুলোকে বিএনপি বানিয়ে ঢুকিয়ে ফেলছে দলে। 

শুধু তাই নয় সরেজমিনে আমি নিজেই দেখেছি ৫ আগষ্টের পর কিছু কিছু ঘটনার দায়ভার বিএনপি'র কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে,যেখানে বিএনপি'র কোন পোড় খাওয়া নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা নেই যারা করেছেন তাদেরকে ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকা অবস্থায় আম্লীগ হিসেবে কাজ করতে দেখা গেছে। এই আম্লীগ গুলো আওয়ামী লীগকে শেষ করে এখন বিএনপি'র উপর ভর করেছে। এরা কখনোই বিএনপি'র ছিলনা, আজও নেই ভবিষ্যতেও থাকবে না কারণ এরা বিএমপি। নট বিএনপি সুতরাং সকলকে সাবধান হতে হবে এই অনুপ্রবেশকারী বিএমপি থেকে। সময় থাকতে সংঘবদ্ধভাবে এদের প্রতিহত করুন। না হলে এই বিএমপি একদিন বিএনপিকে ধংস করে দেবে। কেননা বিএনপি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়ে ওঠা দল আর বিএমপি হলো মীর জাফরের বংশধর,যাদের জন্মই আজন্ম পাপ।


                লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

     Email: rabidchanchall@yahoo.com


Post a Comment

0 Comments