অরক্ষিত স্বাধীনতা,সুরক্ষার শপথ
রাবিদ মাহমুদ চঞ্চল
একাত্তর সালে আমার জন্ম হয়নি,সেকারণে বাংলাদেশ প্রথম স্বাধীনতা দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে আমার পরম সৌভাগ্য আমি ২০২৪ এর স্বাধীনতা দেখতে পেরিছি। সেই স্বাধীন দেশে আমি যখন চোখ বন্ধ করি তখন আমার মনে হয়-আমার সামনেইতো আবু সাইদ বুক চিতিয়ে দিয়ে বলছে-" কর গুলি তবু আমার স্বাধীনতা চাই" আমি মুক্তি চাই"। আবার দেখছি-মুগ্ধ এসে বলছে,"পানি লাগবে পানি"। এভাবে শত শত আবু সাইদ আর মুগ্ধরা তাদের রক্ত দিয়ে দ্বিতীয় বার আমাদের স্বাধীনতাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে গেছে।
আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায় আমাদের শিক্ষক সমাজ,রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও দল,গণমাধ্যম কর্মী,সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব,ডাক্তার,সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য,অভিভাবক সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে যারা অকুন্ঠ চিত্তে সমর্থন দিয়ে গেছেন স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে। আমি দেখেছি আবু সাঈদ,মো. ফারুক,ওয়াসিম আকরাম,ফয়সাল আহমেদ শান্ত,মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ,তাহির জামান,রিদোয়ান শরীফ রিয়াদ,শেখ ফাহমিন জাফর,মো.শাহজাহান,সিয়াম,আসিফ ও সাকিল,দিপ্ত দে,দুলাল মাতবর,ইয়ামিন,মো. জিল্লুর শেখ,শাইখ আশহাবুল ইয়ামিন,মো. ইমন মিয়া,হৃদয় চন্দ্র তরুয়া,মো. ফয়েজ,মাহামুদুর রহমান,ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির,রনি প্রামাণিক,রাকিবুল হাসান,নাইমা সুলতানা,মো. আলমগীর হোসেন,নুর আলম,আবু সায়েদ,শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন,ইমরান খলিফা,জসিম উদ্দীন,সাব্বির হোসেন,মিজানুর রহমান ওরফে মিলন,মোস্তফা জামান ওরফে সমুদ্র,মো. রাসেল,জাকির হোসেন,আবদুল্লাহ আল আবির,রিদওয়ান হোসেন সাগর,সজীব সরকার,আরিফ হোসেন ওরফে রাজীব,জুবাইদ হোসেন,কাদির হোসেন,সেলিম তালুকদার,মোবারক হোসেন,সাগর আহম্মেদ,কুরমান শেখ,এটিএম তুরাব হোসেন,মোহাম্মদ ইরফান ভূঁইয়া,তাহমিদ আবদুল্লাহ অয়ন,আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ( সবার নাম না জানা থাকায় সবার নাম প্রকাশ করতে না পারায় ক্ষমা প্রার্থী)।
এবারের সংগ্রামে আমরা হারিয়েছি অনেক ক্ষুদে যোদ্ধাদের। যারা বারান্দায় বা ছাদে খেলছিল এই ভেবে যে তারা স্বাধীন দেশে জন্মেছে। কিন্তু ঐ ছোট্ট সোনামণিরা জানতো না যে - আমাদের একাত্তরের স্বাধীনতা ততদিনে পরাধীনতার শিকলে বাধা পড়েছে। তাইতো তারা বুলেটের আঘাতে হয়েছে নীরব-নীথর। এরা সবাই ২০২৪ সালের দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদ। এই শহীদের কাতারে ছিলেন ছাত্র-জনতা।
আমি দেখেছি সৈরাচার পতনে কোটি মানুষের ঢল। দেখেছি রাজধানীর রাজপথ ছাড়িয়ে জেলা থেকে উপজেলা, গ্রাম থেকে গ্রামে জনসমুদ্র। দেখেছি স্বৈরাতন্ত্রের বেড়া জাল ছিন্ন করতে মানুষের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। সন্তানদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অভিভাবকদের রাজপথ দখলের দূর্বার আন্দোলন।
সুদীর্ঘ ১৬ বছরের সৈরাতন্ত্রের পতন করতে ঝরে গেছে অজস্র প্রান। অবশেষে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে ৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট) এক মাহেন্দ্রক্ষণের মধ্যে দিয়ে আমাদের কাছে ফিরে আসে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। ঐদিন মন খুলে কোটি কন্ঠে গেয়ে ওঠে পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল, রক্ত লাল। তবুও কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে শত শত সাইদ, মুগ্ধদের দেওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার স্বাধীনতা নামের অমূল্য সম্পদ অরক্ষিত করতে চলছে সুগভীর চক্রান্ত। অতীত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকার ৭১ এর স্বাধীনতা ছিল ভিনদেশি মানুষ,সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার বিরুদ্ধে আর ২০২৪ এর স্বাধীনতা ছিল দেশীয় মাফিয়া,দালাল,লুটেরা,সৈরাচার,বাক-স্বাধীনতা হরনকারী,কুৎসিত চিন্তার মানুষিকতা পোষনকারী কিছু রক্ত পিপাসুর বিরুদ্ধে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমির আলোচনা পড়তে গিয়ে আমরা ইতিহাসের পাতায় যতটুকু দেখেছি পাকিস্তানিরা আমাদের রাজনৈতিক অধিকার,অর্থনৈতিক অধিকার,সামাজিক অধিকার,বাক-স্বাধীনতার অধিকার হরন করেছিল বলেই আমাদের পূর্ব পুরুষেরা স্বাধীনতা অর্জন করতে রচনা করেন এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের। যার ফল হিসাবে আসে মহান স্বাধীনতা। আমাদের স্বাধীনতার অর্জনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ থেকেই স্বাধীনতা অরক্ষিত হওয়া চক্রান্ত আমরা দেখেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধীনায়ক এমএজি ওসমানীর অনুপস্থিতিতে মিস্টার আরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন নেয়াজি। বাহ্ কি চমৎকার ইতিহাস। দেশ স্বাধীন হওয়ার প্রথম প্রহসন মনে হয় এটি। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধীনায়ককে বাদ দিয়ে আত্মসমর্পণের পর্বটি রচনার মধ্যে দিয়ে যে চক্রান্ত সেদিন করা হয়েছিল, বোধ করি সেই চক্রান্তের মহানায়করা এবারও ঘাপটি পেতে বসে আছে আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে অরক্ষিত করার জন্য। তারা শিয়াল-শকুন-হায়নার বেশে আছে আমাদের মাঝে। সেই শকুনি মামাদের বদৌলতে স্বাধীনতার ক্ষন কাল পরেই বাস্তরীর সারা শরীরের জাল জড়িয়ে থেকে নিজের সম্ভ্রম ঢাকার ছবি আমরা দেখেছি।
তাই যদি হয় তাহলে বিগত আওয়ামী শাসন আমলে পাকিস্তানের চেয়ে কোন অংশে আমরা সুরক্ষিত ছিলাম। একে একে যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে আমাদের সামনে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে - ১) রাজনৈতিক স্বাধীনতা: আওয়ামী শাসন আমলে তাদের দোসর ছাড়া কোন দল মাঠে মুক্ত রাজনীতি চর্চা করতে পেরেছে? লাখ লাখ মামলা বোঝা মাথায় নিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পাড়ি দিতে হয়েছে বছরের পর বছর। হাজার রজনী কেটে ঝোপঝাড়ে,বনে জঙ্গলে। কত রাত প্রেয়সি চোখের জল ফেলে কাটিয়ে তার প্রিয়তমকে ছাড়া। কত সন্তান রাতের পর রাত বঞ্চিত হয়েছে পিতার আদর থেকে। কেউবা কাটিয়েছেন জেলের ভিতরে,কেউবা আবার হয়েছেন দেশান্তরি। গুম,খুনের হিসাব না হয় থাকলো বাকি। বিরোধী দল দমন-পীড়নে তৈরি করা হয়েছে "আয়না ঘর"। আওয়ামী লীগের প্রায় ১৬ বছরের সমকালে যে অমানবিক নির্যাতনের রুদ্র মূর্তি আমরা দেখেছি তা ইতিহাসের পাতায় লেখা পাকিস্তান আমলে হার মানিয়েছে।
২) অর্থনৈতিক অধিকার: অর্থনৈতিক অধিকার সম্পর্কে যদি আলোচনা করতে হয় তাহলে ইতিহাসের পাতা থেকে দেখা যায় বাংলাদেশের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী বা বাংলাদেশের (পূর্ব পাকিস্তান) তৎকালীন জিডিপির বৃহৎ অংশ পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো হতো তাদের ব্যয় করার জন্য। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায় ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যে পরিমাণ সম্পদ এ দেশ থেকে লুণ্ঠন করে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছিল তার থেকে হাজার হাজার গুণ বেশি সম্পদ ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সময়কালে বিদেশ ভূমিতে পাচার করেছে এদেশীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। শেয়ার বাজার থেকে শুরু করে ব্যাংক দেউলিয়া মত বিভিন্ন কলাকৌশলে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দেয়া হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। ব্যাংকের ভোল্টে রাখা সোনা পরিনত হয়ে গেছে তামায়। তাহলে কি আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে পারিনা তৎকালীন পাকিস্তানিরা যদি লুটেরা হয় তাহলে প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতা থাকা আওয়ামী লীগ হলো মহা লুটেরা।
৩) বাক স্বাধীনতা : ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ স্পষ্টভাবে বাকস্বাধীনতা কে হরণ করেছে। একের পরে এক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে স্বাধীন গণমাধ্যমগুলোকে। যে সমস্ত গণমাধ্যম নতজানু হয়ে আওয়ামী লীগের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়ে চলেছে তারাই টিকে ছিল বাকিগুলো সব গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। চ্যানেল ওয়ান,দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টিভি,দৈনিক আমার দেশ,দৈনিক দিনকাল আমাদের সামনে দৃশ্যমান উদাহরণ।
এছাড়াও যে সমস্ত চ্যানেল বা সংবাদপত্র গুলো বাজারে প্রচলিত ছিল তাদের সবাইকে রাখা হয়েছিল কঠোর নজরদারিতে। পান থেকে চুন ঘষলে নেমে এসেছে শাস্তির খড়ক। এভাবে বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছে এক মহাতাণ্ডব। প্রতিটি রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বসে ছিল আওয়ামী লীগ ও তার আদর্শের দোসররা। মহান জাতীয় সংসদ কে বারংবার করা হয়েছে কলঙ্কিত।
বারবার প্রহসন মূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে যখন যে ধরনের আইন তাদের নিজেদের পক্ষে প্রয়োজন তেমনই করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিণত করা হয়েছিল দলীয় বাহিনীতে। এতসব মহাযজ্ঞের পিছনে যে ভিনদেশী অপশক্তি তাদের স্বার্থ রক্ষায় আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে এসেছে তা বোধ করি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের খুব করে মনে রাখা উচিত আওয়ামী লীগের অপকর্মের মহাযজ্ঞ পরিচালনার ক্ষেত্রে ভিনদেশী যে শক্তি তাদেরকে সাহস সহযোগিতা -সহমর্মিতা-সমর্থন - শক্তি- সামর্থ্য-অর্থের যোগান দিয়ে এসেছে তারা কিন্তু এখনো তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে একবিন্দু কিছু হোটেনি। ২০২৪ সালের নব স্বাধীন বাংলাদেশের রন্ধে রন্ধে তারা এখনো জাগ্রত রয়েছে।
একাত্তরের স্বাধীনতার পর যে অপশক্তি বাংলাদেশের নিজস্ব স্বাধীন সত্তা ধ্বংস করার চক্রান্তে মত্ত ছিল তারা এখনো জীবন্ত। তারা ঘাপটি মেরে বসে আছে,ফনা তুলে বিষের পেয়ালায় ভিজানো সূচালো দাঁতের অগ্রভাগে গেঁথে রেখেছে বিষ। যেকোনো মুহূর্তে বেহুলা লক্ষিন্দরের বাসর ঘরে ছোট্ট একটি ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করে কাল-নাগিনীর সেই বিষাক্ত ছোবল দেওয়ার অপেক্ষায়। ভিনদেশীর অপশক্তি যেকোনো মুহূর্তে আমাদের লাল সবুজের পতাকাকে শকুনের মতো ছিড়ে খাওয়ার চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। কেননা তারা কখনোই চাই না-বাংলাদেশী জাতি সত্তা জাগ্রত হোক তারা চায় বাংলাদেশের মানুষকে ক্রীতদাস হিসেবে তাদের পায়ের কাছে নতজানু করে রাখতে।
মূল প্রতিপাদ্য: আর কয়েক মাস পরে আমাদের দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ব বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজা। যারা বাঙালী নয়, বাংলাদেশী জাতীয়তা বাদে বিশ্বাস করেন এমন শক্তি গুলো একত্রিত হয়ে চোখ -কান খোলা রাখুন,সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি। এই পূজা হতে পারে ঐ ভিনদেশীদের একটা টার্গেট। বিগত আওয়ামী শাসন আমলে আমরা যে শিক্ষা নিয়েছি সে গুলো যেন আমরা ভুলে না যায়। উদুর পিন্ডী বুদোর ঘাড়ে চাপানোর খেলায় তারা কিন্তু পাকা খেলোয়াড় এটা কোন মতে ভুলবেন না।
বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে করজোড়ে অনুরোধ করবো বহু তাজা প্রানের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে অক্ষুন্ন রাখুন। আমি যখন চোখ বন্ধ করে রাখি তখন আমার মনে হয়- মুগ্ধ এসে বলছে,পানি লাগবে পানি। আমি দেখি আবু সাইদ বুক চিতিয়ে দিয়ে বলছে কর গুলি তবু আমার স্বাধীনতা চাই।
আপনি একবার চোখ বন্ধ করে দেখুন, আবু সাইদ, মুগ্ধের স্থলে আপনার সন্তানকে প্রতিস্থাপন করে দেখুন,হয়তো সেও একই কথা বলছে। দোহাই আপনাদের কাছে যারা সৈরাচার হটিয়ে আনন্দ উল্লাসে মত্ত হয়ে আছেন। তারা এখনি নিজেদের সংযত করুন। স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন এটা হৃদয়ে ধারণ করুন। সর্বদা জাগ্রত থাকুন যেন কোন ভিনদেশী শকুনি মামা আপনার-আমার সন্তানের রক্তের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে বিনষ্ট করতে না পারে।
মনে রাখতে হবে আমাদের চারপাশে ওত পেতে থাকা শেয়াল-শকুন হায়না, ওরা আমাদের দেশটা ভালো থাকুন কখনো তা চাই না। তাই আজ থেকে আমাদের অঙ্গীকার হোক আমার দেশের স্বাধীনতাকে আমি সুরক্ষিত রাখবো কোন অবস্থায় অরক্ষিত হতে দেব না। এটাই হোক আমার মা-মাটি- মানুষের শপথ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
Email: rabidchanchall@yahoo.com
0 Comments