শিরোনাম

10/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দিন।

গরীবের সুন্দরী বধু যখন খুলনা ০৬

 


গ্রাম গঞ্জে একটা রসিকতা মূলক প্রবাদ প্রায় শোনা যায়। কেউ বা হাসি তামাশার ছলে, কেউবা আবার কোন ঘটনার উপসংহার টানতে বলেন থাকেন -"এতো গরীবের ঘরে সুন্দরী বধু " লোলুপ ধনী প্রতিবেশির নজরতো একটু আকটু পড়বেই।
এই গরীবের সুন্দরী বধু বা কন্যার প্রতি ধনী বা ক্ষমতাবানদের লোলুপ দৃষ্টির ইতিহাস অনেক প্রাচীন। অতি প্রাচীনে না ফিরে যদি একটু মোঘল দরবারে নজর দেই তাইলে ভুরি ভুরি উদাহরণ আমাদের চোখে বিধে। বিশেষ করে সুন্দরী নূরজাহানে কে পেতে কি না করেননি সম্রাট জাহাঙ্গীর। শেষমেস পরমা সুন্দরী নূরজাহানকে পেতে তার স্বামী শের আফগানকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করতে পিছপা হয়নি  সম্রাট জাহাঙ্গীর। এখানে একটু বলে রাখা ভালো অপসরা সুন্দরী নূরজাহানের স্বামীকে হত্যা করেছিল জাহাঙ্গীরের নিযুক্ত সেনাপতি।  প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের এমন শত শত ঘটনা উল্লেখ আছে। এতো গেল কয়েক শত বছর আগের কথা অধুনা কালে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। যার বিভিন্ন রুপ আমরা দেখতে পাই সিনেমা,গল্প,উপন্যাসে। কেননা সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে লেখা হয় সেই সময়ের সাহিত্য। 
বিশেষ করে ৮০ কিংবা ৯০ এর দশকের অনেক সিনেমাতে এমন কিছু চরিত্র উপস্থাপন করা হতো। যেখানে দেখা যেত একজন গরীব লোকের চরিত্রে অভিনয় করা লোকের বউ বা কণ্যা যদি জমিদার কিংবা কোন মাস্তানের নজরে পড়ে যেত তাহলে আর রক্ষা নেই, ছলে-বলে-কলা-কৌশলে ঐ সুন্দরী বধু বা কন্যাকে তুলে নেওয়া হবে। প্রয়োজনে গরীব চরিত্রে অভিনয় করা লোকটিকে খুন করা, না হলে মিথ্যা মামলায় জেল হাজতে বন্দি করে তারপর সুন্দরী রমনীকে কবজা করেই তবেই ক্ষান্ত হবে লোলুপ দৃষ্টি ধারী। আর এসব কাজে খুব খেয়াল করলে দেখবেন কিছু দালাল বা চামচা কাজ করে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জমিদার বা মাস্তানরাতো আর গরীবের কুঠিরে যায় না, এই চামচারাই কোথায় কোন গরীবের ঘরে সুন্দরী বধু বা কন্যা আছে তার খরব এনে দেয়।
এঘটনার অন্তরালে যেটা প্রতিয়মন হতো যে অবিভাবকের অক্ষমতা কিংবা অবিভাবকের সামাজিক চরিত্রের ক্ষুদ্রতার কারনেই লোলুপ দৃষ্টি ধারী মানুষের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারা।
এমন সব চরিত্র সিনেমা, উপন্যাস কিংবা গল্পে রয়েছে তা কিন্তু নয় বাস্তবেও রয়েছে অসংখ্য উদাহরণ। শুধু যে নারী চরিত্র হরনে লোলুপ দৃষ্টি ধারীদের নজর থাকে তা বলা যাবে না। নজর থাকে গরীবের ধন-সম্পত্তিতে। নিজের হাজার থাকতেও শকুনি দৃষ্টি থাকে গরীবের ভিটে মাটিতে। এর প্রমান মিলে কবি গুরু রবি ঠাকুরের দু বিঘা জমি কবিতায়। এখানে কবি বলেন-এ জগতে হায় সেই বেশি চায়,আছে যার ভুরি ভুরি, রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি। 
কবি গুরু রবি ঠাকুরের কবিতা আর উপরে সম্রাট জাহাঙ্গীর কর্তৃক অপসরা তুল্য সুন্দরী নুরজাহানকে অর্জন এবং বিভিন্ন সময়ে সিনেমায় দেখানো চরিত্র,উপন্যাস ও গল্পের ধারাবাহিকতায় কয়েকটি বিষয়ের সংগতি রয়েছে বলে আমার কাছে স্পষ্ট মনে হয় যে, তাহলো লোভের সাথে অবিভাবকের অক্ষতা। 
খুলনা ০৬ সংসদীয় আসনে সাথে উপরে উদাহরণ গুলো বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন প্রতিবার সংসদ নির্বাচনের আগে খুলনা ০৬ (পাইকগাছা-কয়রা মিলে গড়ে ওঠা) আসনের উপর দৃষ্টি পড়ে বাহিরে নেতাদের। হোক সে আওয়ামী লীগ,বিএনপি কিংবা জাতীয় পার্টি। এসময় আবার স্থানীয় অনেক নেতা ধারণ করেন নানান চরিত্র। কেউ বা হয়ে উঠেন সম্রাট জাহাঙ্গীরের সেই সেনাপতি, কেউবা আবার জমিদারের চামচা,কেউবা আবার দুই বিঘা জমি কবিতায় উল্লেখ্য জমিদার বা তার সভাসদ। 
ঠিক প্রতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে বহিরাগত ব্যক্তিদের প্যানা পোস্টারে ছেয়ে যায় অলিগলি। এসব প্যানা- পোস্টারে যাদের সৌজন্যে ছাপা হয় তারা সবাই এই এলাকার বাসিন্দা আর যে নেতার পক্ষে প্রচারনা চালানো হয় তিনি এই দুই উপজেলার বাহিরের মানুষ। হতে পারে সেই নেতার জন্ম অন্য এলাকায় তবু তিনি যদি এই দুই উপজেলার কোন একটির নাগরিক অর্থাৎ ভোটার হন তাহলে আপত্তি থাকে না। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এসব নেতাদের এই দুই উপজেলার সাথে নেই কোন সম্পর্ক। এসব অতিথি পাখিদের এই এলাকায় ডেকে এনে এই চামচা শ্রেনীর কি লাভ? এটা ভাবতেই মনে পড়ে যায় উপরের ঐ চরিত্র গুলোর কথা। 
আর যারা অতিথি পাখির মত হুট করে চলে আসেন তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলতে খুব মন চাই- আপনারা কি পাইকগাছা-কয়রা কে গরীবের সুন্দরী বধু বা কন্যা ভাবেন বলুনতো। নাকি আপনাদের চরিত্র ঐ জমিদারদের মতো যাদের দেখানো হতো সিনেমার পর্দায়। মনে রাখবেন এই পাইকগাছা-কয়রার পুণ্যভূমিতে জন্ম নিয়েছেন জাফর আউলিয়া,স্যার পিসি রায়,মেহের মুসুল্লি, বিনোদ বিহারী সাধু,শহীদ এম এন এ গফুর, শেখ রাজ্জাক আলী, রহমতুল্লাহ দাদু ভাই, খান সাহেব কোমর উদ্দীনের মত বহু গুনীজন। যবনিকাতে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের বলি আপনারা আপনাদের কোমর শক্ত করুন। গরীবের চরিত্রে অভিনয় করা বাদ দিয়ে নিজের নির্বাচনী আসন খুলনা ০৬ এ নিজেদের মত করে অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। দয়া করে নিজেদের এই আসনকে অন্যের কাছে গরিবের সুন্দরী বধু বা কন্যা হিসেবে উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকুন। আর যারা চামচার ভূমিকায় অভিনয় করতে আগ্রহী তাদেরকে চিহ্নিত করে ত্যাজ্য করুন। সব সময় মনে রাখবেন বিদেশি ঠাকুর থেকে স্বদেশী..........................শ্রেয়।


                           রাবিদ মাহমুদ চঞ্চল
            লেখক: সাংবাদিক ও কলাম লেখক
           Email: rabidchanchall@yahoo.com

Post a Comment

0 Comments