করোনাকালে খুলনার পাইকগাছায় ঐতিহ্যেবাসী কপোতাক্ষ নদ ও শিবসা নদীর চরভরাটি জমি দখলের মহোৎসব শুরু হয়েছে। কপোতাক্ষ নদের চর ভরাটি জমি স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে প্রভাবশালী নেতা সমীরণ সাধুর ছত্রছায়ায় ইয়ামিন ও আব্দুস সালাম দখল নিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায় কপোতাক্ষ নদে হিতামপুর মৌজার অংশে চরভরাটি জমির দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এসব ঘটনায় তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রশাসনে নিকট বিভিন্ন ব্যক্তির পক্ষ থেকে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করা হলেও করোনা কালের ব্যস্ততায় দখল প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রশাসনের অগ্রগতি হচ্ছেনা বলে দাবী অভিযোগকারীদের।
সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের নাম ব্যবহার করে দখলদাররা নদীর চরভরাটি এসব জমি দখল করে বাঁধ প্রদান শুরু করেছে। ইতোমধ্যে গত ৪ জুলাই উপজেলা সদরে শিবসা নদীর চরভরাটি জমিতে বাঁধের কাজ শুরু করেন, উপজেলার লস্করের কড়ুলিয়া এলাকার জনৈক চন্ডি চরণ বিশ্বাস। এর আগে কপোতাক্ষ নদের পাইকগাছার গদাইপুরের হিতামপুর এলাকায় চরভরাটি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা জমিতে বাঁধ দিয়ে দখল প্রক্রিয়া শুরু করেন, রাড়ুলীর জনৈক আব্দুস সালাম। দখলদাররা সেখানকার ১ নং খাস খতিয়ানের ৯৫১ দাগের বোয়ালিয়া এলাকার চরভরাটি প্রায় ৩০/৩৫ বিঘা জমিতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে দখলে নিয়েছে।
অভিযোগকারী সূত্রে জানা যায়, পাইকগাছা সদরের শিবসা চরভরাটি জমিতে দু’দফায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: শাহরিয়ার হক।
এব্যাপারে দখলদার চন্ডিচরণ অবৈধভাবে দখলের কথা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয় জনৈক নেতাকে বলে সরকারের পতিত জমিতে আবাদের লক্ষ্যে বাঁধ দিচ্ছেন তিনি। তবে সরকারের যখন প্রয়োজন হবে তখন দখল ছাড়ার কথাও বলেন তিনি।
অন্য দিকে উপজেলার রাড়ুলী এলাকার মো: মোকছেদ গাজীর ছেলে আব্দুস সালাম চরভরাটি জমিতে বাঁধ-বন্দি করতে থাকলে জনৈক আক্তারুল বাদী হয়ে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি উপজেলা সার্ভেয়ার ও কানুনগুহকে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের কথা বলেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত সালাম গাজীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিংড়ি চাষের জন্য জলমহলের ইজারা গ্রহনে তিনি একটি আবেদন করেছেন। এছাড়া সমীরন সাধুর নির্দেশে কাজ করছেন বলেও তিনি ও বাঁধের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরাও সমীরণ সাধুর নির্দেশে কাজ করছেন বলে জানান।
এদিকে গত ৪ জুলাই রবিবার সকাল ১০ টার দিকে উপজেলা সার্ভেয়ার ও কানুনগুহ ঘটনাস্থলে গিয়ে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। এসময় তারা জনৈক ইয়ামিন নামে একজনকে ভূমি অফিসে নিয়ে যান।
এবিষয়ে কানুনগো বলেন, এসিল্যান্ড স্যারের নির্দেশে তিনি তাকে ডেকে নিয়েছিলেন এবং তার নির্দেশেই তাকে ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর গত ৫ জুলাই দখলদাররা ফের সেখানে বাঁধের কাজ চলমান রেখেছেন।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারিয়ার হক বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, মঙ্গলবার আমাদের লোক সেখানে গিয়ে সরকারি সম্পত্তির সীমানা জরিপপূর্বক সরকারের দখলে নিয়ে নিবেন। এছাড়া আরো যারা সরকারি সম্পত্তির অবৈধ দখল নিয়েছেন আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশ হলে তাদেরকেও পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে সমিরন সাধু অনেকটাই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার ছলে প্রতিবেদককে বলেন, এই জমি আমার দরকার না, কেউ হয়তো আমার নাম ব্যবহার করতে পারে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, নদী হলো আমাদের প্রান, অবশ্যই নদী রক্ষার সার্থে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নদীর চরভরাটি জমি সরকারের। তা রক্ষা করার দায়িত্ব অবশ্যই প্রশাসনের, আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নেব।
0 Comments