..............রাবিদ মাহমুদ চঞ্চল..................
গ্রাম বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, হাতি গর্তে পড়লে চামচিকাও নাকি পাছায় লাথি মারে। অনেকদিন ধরে ভাবতাম আসলে এটা মনে হয় কথার কথা,বাস্তবে কি তাই হয়? আদৌ কি তা সম্ভব? কিন্তু গত (২ জুলাই) শুক্রবারের একটি ঘটনার পর আমার মনে হল বাস্তবে মানুষ বিপদে পড়লে সুযোগ-সন্ধানী কিছু মানুষ,মানুষের বিপদকে কাজে লাগিয়ে মৌখিক বাকভঙ্গি বা কথার মধ্য দিয়ে এক ধরনের লাথি প্রয়োগ করে থাকে যা হয়তো কারো গায়ে না লাগলেও মনে আচড় কেটে থাকে। মনে হয় এটাই হলো চামচিকের সেই লাথি।
অতি অতিসম্প্রতি খুলনা জেলার পাইকগাছায় এক সুপরিচিত সাংবাদিক তার পারিবারিক মামলায় আটক হয়েছেন। এই ঘটনার পর বিশেষ শ্রেনীর কিছু মানুষ ফেসবুক সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনায় মেতেছেন। এক পর্যায় তাদের সমালোচনা এমন রুপ নিয়েছে যে ঐ সাংবাদিক কে তারা সামাজিক মাধ্যমে উলঙ্গ করে ফেলছেন। নারী লোভি থেকে গরু চুরি সব বিষয়ে ঐ সাংবাদিক সিদ্ধহস্ত বলে তাদের মন্তব্য। আর এমন সমালোচনায় নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে ফেসবুকে প্রকাশিত স্টাটাসের নিচের মন্তব্য গুলো। যিনি পোস্ট করছেন আর যারা মন্তব্য করছেন তারা সবাই এক বৃত্তের মাঝে বসবাসরত শ্রেণি। বোধ করি আমার মত এটা বুঝতে অন্যদের কষ্ট হয়নি। এখন আমার প্রশ্ন ঐ সাংবাদিক যদি এতই খারাপ কাজে যুক্ত থাকেন তাহলে সে জেলে যাওয়ার পর কেন লিখছেন? আপনাদের কথিত কর্মকান্ডে যদি ঐ সাংবাদিক সত্যিই জড়িত থাকে তাহলে সে বাহিরে থাকতে আপনারা তার সমালোচনা করলেন না কেন? নাকি আপনাদের এই সব সমালোচনা মিথ্যার ফুলঝুরি। যদি আপনি বা আপনারা সত্যবাদী যুধিষ্ঠির দাদা হয়ে থাকেন তাহলে সত্য কথা সময়ে না বলে এখন চামচিকের মত আচরণ করার মানেটা ঠিক আমার মাথায় ডুকলো না।
সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত থাকা মানুষ গুলো সব সময় থাকে একধরনের বিপদে-কেননা সংবাদ প্রকাশ করলে কোন না কোন পক্ষে যাবে এটা স্বাভাবিক, তদরুপ কোন না কোন পক্ষের বিপক্ষে যাবে এটাও স্বাভাবিক। আর এটাই সাংবাদিকতার নীতিকথা বলে আমার মনে হয়। আমরা প্রায় বলে থাকি নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা করতে হবে। কিন্তু নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা বলে কিছু আছে? ধরুন একজন চোর চুরি করে ধরা খেল, সেই বিষয়ে বিষদ আলোচনা করে সত্যতা নিশ্চিত সাপেক্ষে একজন সাংবাদিক রিপোর্ট করলো সবাই সেটিকে বাহ বাহ দিলেও,ঐ চোরের কাছে কিন্তু ঐ সাংবাদিক কখনো বাহ বাহ পাবে না, বরং চোর বেটা আজীবন সাংবাদিককে সুযোগ পেলে প্রকাশ্য না পেলে মনে মনে গালি দিয়ে যাবে এটাই বাস্তবতা।
তো যাই হোক আমরা হাতি আর চামচিকের গল্পে ফিরে আসি। হাতি হলো মস্ত বড়ো এক প্রানী। তার লেজটা দেহ অনুসারে বেশ ছোট সে কারনে দমকলের মত শুঁড় দিয়ে বেশির ভাগ কাজ গুলো হাতি করে থাকে। কয়েক লিটার পানি এই শুঁড় দিয়ে একবারে তুলে নিজের গায়ে মেরে পোকা মাকড় আর চামচিকে তাড়ায়। শুঁড় থেকে ছোড়া পানির ক্ষেপণাস্ত্রের মত শব্দ করে। এতেই কত বাঘ, ভাল্লুক পালিয়ে কূল পায় না আর সেখানে চামচিকেতো! তাই বলবো সময় সবার সব সময় এক রকম যায় না। বিপদ-আপদ,সুখে-অসুখ সবার আছে তাই কাউকে নিয়ে সমালোচনা করার আগে আমাদের ভেবে নেওয়া জরুরী আমরা যাকে নিয়ে সমালোচনা করছি বা যে বিষয় নিয়ে সমালোচনা করছি তা কতটুকুই সত্য বা সময়োপযোগী।
যাই হোক যবনিকায় এটুকুই বলবো নিজেকে হাতি ভাবতে শিখুন, বিপদ গ্রস্ত মানুষের পাশে দাড়াতে না পারলেও মন থেকে তার জন্য মঙ্গল কামনা করে নিজেকে হাতি ভাবুন। একজন মানুষকে ভালো না লাগলে এড়িয়ে চলায় শ্রেয়। তা না করে বিপদে পড়া মানুষকে নিয়ে সমালোচনা করে কিছু ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেকে চামচিকের কাতারে ফেলবেন না।
লেখকঃ গণমাধ্যম ও কলাম লেখক।
Email: rabidchanchall@yahoo.com
0 Comments